নিউজ ডেস্ক ::
পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও যেসব ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না, সে সব ইউপির মেয়াদ আরো তিন মাস বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ইউপিতে একজন চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বার সর্বোচ্চ নব্বই দিন চেয়ারে থাকবেন। তবে তার আগেই নির্বাচন হয়ে গেলে কমে যাবে বাড়তি দায়িত্বের সময়।
দৈব দুর্বিপাকজনিত (করোনা মহামারি) নির্বাচন স্থগিতের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাম পর্যায়ের সরকারে সুযোগটি পাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ এ বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে দ্বৈব দুর্বিপাকজনিত ভোট করতে না পারার চিঠি পেয়েছি। তার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা পাঠিয়েছি। এ ক্ষেত্রে যেসব ইউপির মেয়াদ শিগগিরই শেষ হবে এবং তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন স্থগিত হয়েছে, সেসব ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান, মেম্বাররা সর্বোচ্চ নব্বই দিন দায়িত্ব পালন করবেন।
গত বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) স্থানীয় সরকার সচিবকে এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা পাঠান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান।
এতে উল্লেখ করা হয়, সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি হওয়ার কারণে জনসমাগম এড়ানোর লক্ষ্যে আগামী ১১ এপ্রিল ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ১ম ধাপে ১৯টি জেলার ৬৪টি উপজেলার ৩৭১টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন; সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এর শূন্য পদে উপনির্বাচন এবং সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের ১১নং সাধারণ ওয়ার্ডের শূন্য সদস্য পদে নির্বাচন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
ফলে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ২৯(৩) অনুসারে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯ এর ২৯(৫) ধারা অনুযায়ী পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে বিষয়টি অবহিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
ইউপি আইনের ২৯(৫) ধারায় বলা হয়েছে, দ্বৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্যবিধ কোনো কারণে নির্ধারিত ৫ (পাঁচ) বৎসর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হইলে, সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অনধিক ৯০ (নব্বই) দিন পর্যন্ত, যাহা আগে ঘটিবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবে।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এমন বিষয় সামনে এলে সিটি করপোরেশনে আমরা প্রশাসক নিয়োগ করে থাকি। কিন্তু ইউপিতে যারা দায়িত্ব করছেন, তাদেরই দায়িত্ব দেওয়ার কথা আইনে বলা আছে।
ইউপি আইন অনুযায়ী, কোনো পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, সংশ্লিষ্ট পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ থেকে ৫ বছর সময়ের জন্য ওই পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে, পরিষদ গঠনের জন্য কোন সাধারণ নির্বাচন ওই পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ থেকে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
সবশেষ ২০১৬ সালে ছয় ধাপে ৪ হাজারের বেশি ইউপিতে ভোট করেছিল ইসি। সে সময় ২২ মার্চ ৭৫২টি, ৩১ মার্চ ৬৮৪টি, ২৩ এপ্রিল ৬৮৫টি, ৭ মে ৭৪৩টি, ২৮ মে ৭৩৩টি এবং ৪ জুন ৭২৪টি ইউপিতে অর্খাৎ ছয় ধাপে মোট ৪ হাজার ৩২১টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাকি ১৬২টিতে অন্যান্য সময়ে ভোট হয়েছে।
পরিষদের নির্বাচনের মেয়াদ পূর্তির বিধান মোতাবেক এবার প্রথম ধাপে ২১ মার্চের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করা কথা। সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ৩৭১ ইউপিতে ১১ এপ্রিল ভোটের তারিখ দিয়েছিল। এসব পরিষদে প্রথম সভার তারিখ একেকটাতে একেক রকম হওয়ায় সবাই একই পরিমাণ অতিরিক্ত সময় পদে থাকবেন, তা নয়। এ ক্ষেত্রে যাদের দায়িত্বের মেয়াদ আগে শেষ হবে তারা অপেক্ষাকৃত বেশি বাড়তি দিন পাবেন। যারা প্রথম সভা পরে করেছেন তারা কম বাড়তি সময় পাবেন। কেননা, স্থগিতাদেশ ওঠে গেলে নির্বাচন একই দিন হবে।
ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান বলেন, খুব একটা সময় নাও পেতে পারেন তারা। যদি করোনা পরিস্থিতি এক মাস পরেই স্বাভাবিক হয়ে আসে, তখন তো নির্বাচন হয়ে যাবে। তাই আইন অনুযায়ী, সময়টা তারা বেশি পাচ্ছেন। কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলে সে সুযোগ নাও থাকতে পারে।
পাঠকের মতামত: